ডাঃ দিবাকর দাস অটিজম চিকিৎসা সম্পর্কে সাংবাদিক শাহানাজ পারভীনের করা বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন -
শাহানাজ পারভীনঃ আপনি একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক হিসেবে অটিস্টিক সন্তানের চিকিৎসার ব্যাপারে কতটুকু আশাবাদী
ডাঃ দিবাকরঃ দেখুন অটিজম সম্পর্কে বলতে গেলে প্রথমেই আমাদেরকে জানতে হবে,অটিজম কি রোগ? অটিজম কোন রোগ নয়, অটিজম হ'ল বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ জনিত সমস্যা,যা শিশুর বয়সের সাথে সাথে বেড়ে উঠে না ( Problems with intellectual development)। সুতরাং অটিজম নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই।
শাহানাজ পারভীনঃ আপনি বলেছেন অটিজম কোন রোগ নয়, তাহলে অটিজম এর কারণ কি?
ডাঃ দিবাকরঃ দেখুন অটিজম এর কারণ সম্পর্কে এখনো সঠিক কোন কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। গবেষকরা মনে করেন জিনগত সমস্যা এবং টিকার কুফলে অটিজম দেখা দিতে পারে। আমার মনে হয় জন্মের সময় বিভিন্ন সমস্যার কারণে তার স্নায়ুর উপর চাপ, জন্মের পর মা-বাবা সহচর্যের অভাবও অটিজমের জন্য দায়ী।
শাহানাজ পারভীনঃ অটিস্টিক শিশুরা কি প্রতিবন্ধী?
ডাঃ দিবাকরঃ দেখন আমি আগেও বলেছি অটিস্টিক বাচ্চারা প্রতিবন্ধী নয়, অটিস্টিক শিশুদের প্রতিবন্ধী ভেবে বিভ্রান্ত হবেন না। অটিজম হ'ল ( নিউরোডেভেলপমেন্ট ডিজঅর্ডার) স্নায়বিক বিকাশে বাধাগ্রস্ততা, যা বয়স তিন বছর হবার পূর্বেই প্রকাশ পায়।
শাহানাজ পারভীনঃ কিভাবে বুঝা যাবে বাচ্চাটি অটিস্টিক?
ডাঃ দিবাকরঃ একটি শিশুর জন্মের ৩ বছরের মধ্যে অটিজমের লক্ষণ প্রকাশ পায়। প্রথম ১৮ মাস বয়স পর্যন্ত এটা বোঝা যায় না। ১৮ মাসের পর থেকে ৩ বছর বয়সের মধ্যে একটা শিশুর মধ্যে কিছু লক্ষণ দেখা যায়। যেমন-
শিশু অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে সামাজিক মেলামেশা করতে চায় না। নিজের মতো করে চলতে চায়।
এই শিশুরা মায়ের সঙ্গে বা অন্যদের সঙ্গে হয় কথাবার্তা বলে না প্রথম থেকে, অথবা বললেও ১৮ মাস বয়সে এসে কথা বলা কমে যেতে থাকে।অন্যের সঙ্গে কথা কমে যাওয়ার পাশাপাশি নিজে নিজে কথা বলা শুরু করে শিশুটি। এছাড়াও আচরণগত অসুবিধা, কথাবার্তার অসুবিধা ও সামাজিক মেলামেশা, অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে মেলামেশা না করার প্রবণতা এই ৩টি জিনিস যখন থাকে একটি ৩ বছরের শিশুর মধ্যে, তখন বুঝতে হবে সে অটিজমের বৈশিষ্ট্য বহন করছে।
শাহানাজ পারভীনঃ চিকিৎসার মাধ্যমে অটিজম কি ভাল হয়?
ডাঃ দিবাকরঃ দেখুন প্রচলিত চিকিৎসা ব্যবস্থায় অটিজম সারিয়ে তোলার কোন যাদুকরী চিকিৎসা নাই। শুধুমাত্র কিছু থেরাপি দেওয়া ছাড়া। কিন্তু হোমিওপ্যাথিতে অটিজম শিশুদের ভালো মানের চিকিৎসা রয়েছে। চিকিৎসায় শিশুদের বুদ্ধি, ধৈর্য, আই-কট্রাক্ট, শিশুর আচরণ, কথা-বার্তা ইত্যাদি বিষয়ে উন্নতি হয়। এছাড়াও হাইপার শিশুদের আচরণও স্বাভাবিক হয়। ‘অটিস্টিক শিশুদের’ সমস্যা যেহেতু ‘নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার’ সেহেতু প্রয়োজন ‘নিউরো ডেভেলপমেন্ট’ চিকিৎসায় অভিজ্ঞতা সম্পন্ন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক। চিকিৎসা শুরুর পর রোগীর মানসিক উন্নতি হলে, আগের তুলনায় মনোযোগী এবং নিজের কাজ নিজে করার আগ্রহ তৈরি হলে বুঝতে হবে চিকিৎসা সঠিক হচ্ছে। তবে, একথা স্মরণ রাখতে হবে এ পরিবর্তন প্রথম দিকে ধীরে-ধীরে হয়। অটিস্টিক শিশুদের চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথির সফলতা এবং ঝামেলা মুক্ত চিকিৎসা পদ্ধতিতে আকৃষ্ট হয়ে ক্রমেই এই চিকিৎসার প্রতি রোগীদের আস্থা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
শাহানাজ পারভীনঃ আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
ডাঃ দিবাকরঃ আপনাকেও।
প্রকাশক ও সম্পাদক : জাহাঙ্গীর আলম বাবু
মোবাইল : ০১৭১১৩১১০৭৪-০১৫৫৬৮১৮৬৮০
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : পশ্চিম শেওড়াপাড়া ইকবাল সরণি মিরপুর ঢাকা কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত