মোঃ ইব্রাহিম খলিল(ময়মনসিংহ):
স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫৪ বছর পার হলেও দেশের অনেক অঞ্চল এখনো মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। এমনই এক অবহেলিত অঞ্চল হলো ময়মনসিংহ। একটি বিভাগীয় শহর হিসেবে এর কাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। স্বাস্থ্যখাতে কাঠামোগত দুর্বলতা, চিকিৎসা সরঞ্জামের সংকট ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর অভাবে লাখো মানুষের চিকিৎসা এখনও নির্ভর করছে একটি মাত্র সরকারি হাসপাতালের ওপর।
জাতির এই দীর্ঘপ্রতীক্ষিত অধিকার বাস্তবায়নে নানা সময় নানা সরকার ক্ষমতায় এলেও, স্বাস্থ্যসেবাকে মৌলিক অধিকারের পর্যায়ে প্রাধান্য দিয়ে তেমন কোনো উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে পারেনি। বিভিন্ন সময় বরাদ্দ এলেও, দুর্নীতির অদৃশ্য চক্রে তা হারিয়ে গেছে।
তবে আশার আলো দেখিয়েছে সাম্প্রতিক পট পরিবর্তন। ছাত্র ও জনতার অভ্যুত্থানে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের ভাগ্য পরিবর্তনে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বিশেষ করে চীন-বাংলাদেশ স্বাস্থ্য খাতে সহযোগিতা এবং নতুন চিকিৎসা প্রকল্পের সূচনা জনগণের মাঝে যে আশার সঞ্চার করেছে তার কোন অবকাশ নেই।
এই প্রকল্পের আওতায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আধুনিক হাসপাতাল কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। শুরুতে তিনটি অঞ্চলকে অগ্রাধিকার দেওয়া হলেও, স্বাস্থ্যসেবা থেকে দীর্ঘদিন বঞ্চিত ময়মনসিংহবাসীর দাবি—এই তালিকায় বিভাগীয় শহর ময়মনসিংহকে অগ্রাধিকারভিত্তিতে অন্তর্ভুক্ত করা হোক।
ময়মনসিংহে স্বাস্থ্যসেবার বাস্তব চিত্র
বর্তমানে ময়মনসিংহে একটি মাত্র সরকারি হাসপাতাল—ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল—দ্বারা পুরো বিভাগীয় অঞ্চলের স্বাস্থ্যসেবা পরিচালিত হচ্ছে। ধারণক্ষমতার কয়েক গুণ বেশি রোগী প্রতিদিন এখানে চিকিৎসা নিতে আসে। ফলে চিকিৎসার মান যেমন ব্যাহত হচ্ছে, তেমনি রোগীদের দুর্ভোগও চরমে পৌঁছেছে। এমনকি আশপাশের জেলা ও উপজেলা থেকেও অসংখ্য মানুষ স্বাস্থ্যসেবার জন্য এখানে ভিড় জমায়, অথচ কাঙ্ক্ষিত অবকাঠামো ও জনবল নেই।
স্বাস্থ্যসেবায় অসম উন্নয়ন চিত্র
বাংলাদেশে বর্তমানে আটটি বিভাগীয় শহর থাকলেও, স্বাস্থ্যসেবা ও অবকাঠামো উন্নয়নে এসব শহরের মাঝে প্রকট বৈষম্য দেখা যায়। জনসংখ্যা, নাগরিক চাহিদা ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে এগিয়ে থাকলেও, ময়মনসিংহ অনেকটাই উপেক্ষিত। উন্নয়ন ও সেবার দিক দিয়ে অন্যান্য বিভাগ যেখানে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যাচ্ছে, ময়মনসিংহ সেখানে আজও পিছিয়ে। নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থেকে শুরু করে পরিবেশবান্ধব নীতির অভাব ও অবহেলিত স্বাস্থ্যব্যবস্থা—সবই চিত্র তুলে ধরছে অনগ্রসরতা ও বঞ্চনার।
বঞ্চিত জনগণের দাবি
ময়মনসিংহবাসী মনে করে, অন্তর্বর্তী সরকারের বর্তমান স্বাস্থ্য প্রকল্প বাস্তবায়নের এই সময়ে ময়মনসিংহকে অন্তর্ভুক্ত করাই হবে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। এতে শুধু এই অঞ্চলের স্বাস্থ্যসেবা জোরদার হবে না, বরং জনসাধারণের দীর্ঘদিনের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূর্ণতা পাবে। প্রায় দেড় কোটিরও বেশি মানুষের চিকিৎসা চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে ময়মনসিংহে একটি পূর্ণাঙ্গ আধুনিক হাসপাতাল কমপ্লেক্স স্থাপন সময়ের দাবি।
স্বাধীনতার পাঁচ দশক পরেও মৌলিক অধিকার থেকে পিছিয়ে থাকা ময়মনসিংহবাসী আজ চায় সম্মান, চায় স্বাস্থ্যসেবা, চায় উন্নয়নের ছোঁয়া। স্বাস্থ্যখাতে চীন-বাংলাদেশ যৌথ প্রকল্পের সুফল যদি এই অঞ্চলের জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানো যায়, তাহলে ‘২৪-এর বিপ্লব’ সত্যিকারের জনকল্যাণে রূপ নিতে পারবে। এখন সময়, ময়মনসিংহের প্রতি সরকারের সুদৃষ্টি দেওয়ার—এটাই প্রত্যাশা দেড় কোটি মানুষের।